খোশখবর ডেস্কঃ সোমবার ১৩ জানুয়ারি অতি ভোরে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর ত্রিবেণী সঙ্গমে ভক্তদের স্নানের মাধ্যমেই শুরু হয়ে গেল ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ।প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা একটি বিশাল আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় আয়োজন যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মেলা ১২ বছরের ব্যবধানে আয়োজিত হয়।হিন্দু দর্শন অনুযায়ী, মহাকুম্ভ মেলায় স্নান করা হলে পাপ মোচন হয় এবং মোক্ষ লাভ করা যায়।মহাকুম্ভ মেলা সমুদ্র মন্থনের কাহিনী থেকে এসেছে যেখানে দেবতা এবং দানবের মধ্যে অমৃতের জন্য যুদ্ধ হয়েছিল।
১। ১৩ জানুয়ারী থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৫ দিনের মহাকুম্ভ উৎসবে প্রায় ৪৫ কোটি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে,যার মধ্যে ১.৫ কোটি বিদেশী পর্যটকও থাকবেন। এই সমাবেশকে বলা হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম মানব সমাবেশ। ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই অনুষ্ঠান ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র এবং আধ্যাত্মিক দিক প্রদর্শন করবে। এটি প্রতি ১২ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়।
২। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, এটিকে বিশ্বাস, ভক্তি এবং সংস্কৃতির একটি পবিত্র সঙ্গম বলে অভিহিত করেছেন। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ স্যানিটেশন, নিরাপত্তার পাশাপাশি ‘ডিজিটাল কুম্ভ’-এর উপর জোর দিচ্ছেন।
৩। আধ্যাত্মিকতার বাইরেও এই মহাকুম্ভের পিছনে আছে একটি বিশাল অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি - যাতে রাজস্ব ৩-৪ বিলিয়ন ডলার (২৫,০০০ কোটি টাকা) বৃদ্ধি পাবে এবং ২ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।এই বিপুল আর্থিক বিনিময় স্থানীয় বিক্রেতা, কারিগর এবং শিল্পকে উপকৃত করবে।
আরও পড়ুনঃ
৪। এবারের মেলার আয়োজনে ডাবর, আইটিসি এবং মাদার ডেইরির মতো প্রধান ব্র্যান্ডগুলি প্রচুর বিনিয়োগ করছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকার অবকাঠামো, রাস্তাঘাট এবং স্যানিটেশন উন্নত করার জন্য ৬,৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা,এআই ক্যামেরা, জলের নিচে ড্রোন, জীবন রক্ষাকারী ডিভাইস ইত্যাদি।
৫। মহাকুম্ভের সময় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশ শহরজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই প্রথম ত্রিবেণী সঙ্গম এলাকায় সর্বক্ষণ নজরদারি চালানোর জন্য জলের নীচে ১০০ মিটার পর্যন্ত ডুবে থাকা ড্রোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১২০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম টেথার্ড ড্রোনও মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়।
৬। মহাকুম্ভের প্রবেশস্থলে রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণ করতে ২,৭০০টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে।এই ক্যামেরাগুলোতে প্রতিটি মানুষের মুখ সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
৭। যে কোনও রকম অনলাইন হুমকি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিতে ৫৬ জন সাইবার যোদ্ধার একটি দল কাজ করবে। এজন্য শহরের সমস্ত থানায় সাইবার হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে।
৮। তীর্থযাত্রীদের থাকার জন্য অতিরিক্ত শৌচাগার এবং স্যানিটেশন সুবিধা সহ ১,৫০,০০০ তাঁবু স্থাপন করেছে। কমপক্ষে ৪,৫০,০০০ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে কুম্ভমেলা এক মাসে এই অঞ্চলের ১০০,০০০ শহুরে অ্যাপার্টমেন্টের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ খরচ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
৯। তীর্থযাত্রী, ভক্তদের জন্য বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক বাস সহ যোগাযোগের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে উৎসবের সময় ৯৮টি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে যা ৩,৩০০টি ট্রিপ করবে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ ৯২টি রাস্তা সংস্কার, ৩০টি সেতু নির্মাণ এবং শহরে ৮০০টি বহু ভাষার সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে।
১০। স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার জন্য, অস্ত্রোপচার এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধা সহ অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ২৫টি সেক্টরে ভাগ করে এবারের মেলার আয়োজন।কেন্দ্রীয় হাসপাতালের পাশাপাশি প্রতিটি সেক্টরের প্রতিটিতে ২০ শয্যার হাসপাতাল খোলা হয়েছে।
১১। থাকছে কুম্ভ সহায়িক চ্যাটবট।কুম্ভ সহায়িক চ্যাটবট হল একটি অত্যাধুনিক AI টুল, যা ২০২৫ সালের মহা কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণকারী ভক্তদের রিয়েল-টাইম নির্দেশ এবং আপডেট দেবে। এটি লক্ষ লক্ষ ভক্তের জন্য একটি ডিজিটাল সঙ্গী হিসেবে কাজ করবে। এর কিছু মূল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হল বহুভাষিক সহায়তা প্রদান, , ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক অন্তর্দৃষ্টি।এটি অফিসিয়াল মহাকুম্ভ ২০২৫ মোবাইল অ্যাপ অথবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যাবে।
আরও পড়ুনঃ
১২। মহাকুম্ভ উৎসব চলবে ছয় সপ্তাহ ধরে। ভক্তরা হাতি, ঘোড়ার পিঠে কুচকাওয়াজ এবং রথ নিয়ে বিস্তৃত আচার-অনুষ্ঠান, প্রার্থনা এবং ধর্মীয় শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তারিখের মধ্যে রয়েছে ১৩ জানুয়ারি যা মহাকুম্ভের শুরুর দিন- প্রথম শাহী স্নান। এরপর ধাপে ধাপে আরও কয়েকটি স্নান আছে। যেমন ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি স্নান। এ ছাড়া ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যা স্নান, ৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত পঞ্চমী স্নান, ১২ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা স্নান ও ২৬ ফেব্রুয়ারি মহা শিবরাত্রি স্নান।২৬ ফেব্রুয়ারি পবিত্র জলে স্নানের মাধ্যমে উদযাপন শেষ হবে।
আরও পড়ুনঃ
১৩। বিশ্বজুড়ে সাধু,সাধারণ মানুষ, সেলিব্রিটি সহ ৪৫ কোটিরও বেশি ভক্ত মহাকুম্ভ উৎসবে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল জবস, যাকে তার 'গুরু' স্বামী কৈলাশানন্দ গিরি জি মহারাজ 'কমলা' নামকরণ করেছেন, তিনি এই মহা উৎসবে যোগ দিচ্ছেন। কৈলাসমানন্দ গিরির মতে, তিনি কুম্ভে থাকছেন এবং গঙ্গায় স্নান করার পরিকল্পনাও করছেন। অতীতে অভিনেতা রিচার্ড গিয়ার, চলচ্চিত্র পরিচালক ডেভিড লিঞ্চ, তিব্বতি বৌদ্ধ নেতা দালাই লামার মতো সেলিব্রিটিরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
[ছবি সৌজন্যঃ খোশখবর সাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে পিক্সাবে, আনস্প্ল্যাস, ফ্রিপিক, উইকিমিডিয়া কমন্স, গুগল ফটো সহ বিভিন্ন নিজস্ব সূত্র থেকে]
[ জ্ঞান বা তথ্যের কোনও কপিরাইট হয় বলে আমরা মনে করি না। পৃথিবীর বুকে প্রকাশিত অগুনতি বই, লাইব্রেরিতে ঠাসা সমুদ্র সমান জ্ঞান, অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা আকাশ সমান তথ্য থেকে দু-একটি তুলে এনে পাঠকদের সামনে রাখাই এই ব্লগসাইটের কাজ। তবে জ্ঞানত কোনও ভুল,বিকৃত বা অন্ধ ভাবনার তথ্য প্রকাশ করবে না ‘খোশখবর’।]
0 মন্তব্যসমূহ