একনজরে

10/recent/ticker-posts

Constitution Day of India ২৬ নভেম্বর কেন সংবিধান দিবস? জানুন সংবিধানের আরও তথ্য

২৬ নভেম্বর কেন সংবিধান দিবস? জানুন সংবিধানের আরও তথ্য

খোশখবর ডেস্কঃ ভারতে ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসাবে পালন করা হয়। সংবিধানের ইতিহাসের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখের কথা।এই দিনেই গৃহীত হয়েছিল সংবিধান।জাতির জন্য এটি উৎসর্গ করা হয়েছিল।পরে বাস্তবায়িত করা হয়েছিল ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি।২০১৫ সালে সংবিধানের স্থপতি ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকরের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে ভারত সরকার ২৬ নভেম্বরকে ‘সংবিধান দিবস’ হিসাবে উদ্‌যাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

আরও পড়ুনঃ  


পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় লিখিত সংবিধান হল ভারতের সংবিধান। ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে গণ-পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ভারত বিভাজন ঘটলে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা গণ-পরিষদ ছেড়ে চলে যান।১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ড: রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে গণ-পরিষদের সভায় সার্বভৌম গণ-পরিষদ গঠিত হয় এবং ভারতের সংবিধান প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় এই গণ- পরিষদকে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খসড়া সংবিধান প্রকাশ করা হয়।১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর ৩৯৫টি ধারা এবং আটটি তফসিল নিয়ে সার্বভৌম গণ-পরিষদ সংবিধান গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে সংবিধান সংশোধন করে কোনও কোনও ধারার পরিবর্তন করা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে সংবিধানে সাতটি মৌলিক অধিকার যুক্ত ছিল:

১। সমতার অধিকার (১৪-১৮ নম্বর ধারা)

২। স্বাধীনতার অধিকার (১৯-২২ নম্বর ধারা) স্বাধীনতার অধিকারের ভিত্তি হিসেবে সংবিধান প্রণেতারা সাতটি অধিকার বর্ণনা করেছিলেন-

(ক) বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার

(খ) শান্তিপূর্ণ এবং নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার

(গ) সংগঠন অথবা সঙ্ঘ গঠনের অধিকার

(ঘ) অবাধে ভারতীয় ভূখণ্ডে চলাফেরার অধিকার

(ঙ) ভারতীয় ভূখণ্ডের যে কোনও অংশে বসবাস করার অধিকার

(চ) সম্পত্তি অর্জন, ভোগ এবং হস্তান্তরের অধিকার

(ছ) যে কোনও বৃত্তি, উপজীবিকা, ব্যবসা বাণিজ্যের অধিকার।


৩। শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (২৩-২৪ নম্বর ধারা)

৪। ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (২৫-২৮ নম্বর ধারা)

৫। সংস্কৃতি ও শিক্ষাগত অধিকার (২৯-৩০ নম্বর ধারা)

৬। সম্পত্তির অধিকার (৩১ নম্বর ধারা)

৭। সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার (৩২-৩৫ নম্বর ধারা)

১৯৭৮ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে 'সম্পত্তি অর্জন, ভোগ এবং হস্তান্তরের অধিকার' (৬) কে মৌলিক অধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এই অধিকারটি এখন statutory right বা বিধিবদ্ধ অধিকার।


Constitution Day of India ২৬ নভেম্বর কেন সংবিধান দিবস? জানুন সংবিধানের আরও তথ্য

১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২-তম সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকদের দশটি কর্তব্য সংবিধানে সংযোজন করা হয়:

(১) সংবিধান মান্য করা, সংবিধানের আদর্শ, জাতীয় পতাকা, সঙ্গীত ও প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা-প্রদর্শন।

(২) যে মহান আদর্শ জাতীয় স্বাধীনতা-সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল, সেই মহান আদর্শের প্রতি প্রত্যেক নাগরিকের আনুগত্য প্রকাশ এবং অনুসরণ করা।

(৩) ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও সংহতিকে সমর্থন ও সংরক্ষণ করা।

(৪) দেশকে রক্ষা করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করা।

(৫) ধর্মগত, ভাষাগত, আঞ্চলিক বা শ্রেণীগত বৈষম্যের ঊর্ধ্বে থেকে সকলের মধ্যে ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধের প্রসার ঘটানো। নারীসমাজের মর্যাদা হানিকর প্রথা ও কার্যাবলি পরিত্যাগ করা।

(৬) ভারতের মিশ্র সংস্কৃতি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে মূল্যবান গণ্য করা এবং সংরক্ষণ করা।

(৭) পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন মনোভাব সৃষ্টি।

(৮) বৈজ্ঞানিক মনোভাব, মানসিকতা, অনুসন্ধান এবং সংস্কারের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন।

(৯) জনসাধারণের সম্পত্তি সংরক্ষণ ও হিংসার পথ বর্জন করা।

(১০) দেশের কর্মপ্রচেষ্টা এবং সাফল্যকে উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত কাজের উৎকর্ষ বিধান।


ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা


প্রস্তাবনা হল সংবিধানের মুখবন্ধ বা ভূমিকা। ১৯৪৬ সালের ২২ জানুয়ারি খসড়া সংবিধান রচনা কমিটি প্রস্তাবনাটি গণ- পরিষদের কাছে পেশ করে। ১৯৪৯ সালের ২৭ অক্টোবর গণ-পরিষদ প্রস্তাবনাটি বিবেচনা ও গ্রহণ করে।

‘আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্ররূপে গড়ে তুলতে এবং তার সকল নাগরিকই যাতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তির মর্যাদা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করার জন্য যাতে ভ্রাতৃত্বের ভাব গড়ে ওঠে তার জন্য সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথ গ্রহণ করে আমাদের গণ-পরিষদ আজ, ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ, বিধিবদ্ধ এবং নিজেদের অর্পণ করছি।’

তথ্যঃ মনোরমা ইয়ারবুক ও অন্যান্য


[ছবি সৌজন্যঃ খোশখবর সাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে পিক্সাবে, আনস্প্ল্যাস, ফ্রিপিক, উইকিমিডিয়া কমন্স, গুগল ফটো সহ বিভিন্ন নিজস্ব সূত্র থেকে]

[ জ্ঞান বা তথ্যের কোনও কপিরাইট হয় বলে আমরা মনে করি না। পৃথিবীর বুকে প্রকাশিত অগুনতি বই, লাইব্রেরিতে ঠাসা সমুদ্র সমান জ্ঞান, অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা আকাশ সমান তথ্য থেকে দু-একটি তুলে এনে পাঠকদের সামনে রাখাই এই ব্লগসাইটের কাজ। তবে জ্ঞানত কোনও ভুল,বিকৃত বা অন্ধ ভাবনার তথ্য প্রকাশ করবে না ‘খোশখবর’।]  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code