একনজরে

10/recent/ticker-posts

Mangrove cyclone story সাইক্লোন রুখল মানুষের বন্ধু ‘ম্যানগ্রোভ’, কিন্তু কীভাবে?

সাইক্লোন রুখল মানুষের বন্ধু ‘ম্যানগ্রোভ’, কিন্তু কীভাবে?

খোশখবর ডেস্কঃ ওড়িশাকে বাঁচিয়ে দিল সামান্য ‘ম্যানগ্রোভ’! এতটাই বাঁচাল যে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের কোপে মৃত্যু হয় নি একজন মানুষেরও।সাইক্লোনের নাম ‘দানা’, আবহাওয়া অফিসের বিশ্লেষণে খবর আসছিল তার ভয়ঙ্কর আগ্রাসী গতির কথা।ভয় ধরে গিয়েছিল প্রশাসনের।এমন ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়, প্রকৃতির রোষ থেকে কী ভাবে রক্ষা করা যাবে সবকিছু?  কিন্তু যেমনটা আশঙ্কা করা গিয়েছিল তেমন ক্ষতির মুখে পড়তে হয় নি ওড়িশাকে।আসলে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সামলে নিল প্রকৃতিই।আর স্পষ্টভাবে বলতে গেলে এখান থেকেই শুরু ভিতরকণিকার ম্যানগ্রোভ অরণ্যের গল্প।

আরও পড়ুন 


ম্যানগ্রোভ অরণ্যেই ল্যান্ডফল ঘূর্ণিঝড়ের?

ভিতরকণিকা এবং ধামরা বন্দরের মধ্যে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় দানা, সেখানে মানুষের বসবাস নেই।ওড়িশার অন্যতম বড় বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে ভিতরকণিকার ম্যানগ্রোভ অরণ্য। কুমীরের জন্য বিখ্যাত ভিতরকণিকা,একাধিক পরিযায়ী পাখির বাস। ঝড়ের দাপট পুরোটাই সহ্য করেছে এই অরণ্য।জঙ্গলের কারণেই ঝড়ের গতি জনবসতিতে পৌঁছতে পৌঁছতে অনেকটা কমে গিয়েছে।ধামরার উল্টোদিকের ৯টি দ্বীপ মূলত ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ভরা। সেই ম্যানগ্রোভ ফরেস্টই কার্যত বাঁচিয়ে দিয়েছে উপকূলের জনবসতিকে।প্রায় ২০০ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই ম্যানগ্রোভ বনগুলো দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় দুর্যোগ থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করে আসছে।১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের সময়ও ম্যানগ্রোভ বন বিপুল ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছিল।

সাইক্লোন রুখল মানুষের বন্ধু ‘ম্যানগ্রোভ’, কিন্তু কীভাবে?

বাংলাকেও বাঁচিয়েছে ম্যানগ্রোভ

শুধু ভিতরকণিকা কেন, ২০১৯ সালে যখন বাংলার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, তখন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল।ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের হাত থেকে সুন্দরবনসহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকাকে বাঁচিয়েছে ম্যানগ্রোভ অরন্য, এমনটাই জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। ঝড়ের দাপট পুরোটাই বুক পেতে সহ্য করেছিল সুন্দরবন,যেখানে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য।পরিবেশবিদরা বারবার বলেছেন যে বুলবুলের প্রভাব আরও ভয়ঙ্কর হতে পারত। তার আগে ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লার প্রভাব থেকেও এভাবেই কলকাতাকে রক্ষা করেছিল সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ।

আরও পড়ুনঃ

কীভাবে ভূমিভাগকে রক্ষা করে ম্যানগ্রোভ?

ম্যানগ্রোভ বনের মূল ভূমিকাগুলির মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় উপকূলীয় ভূমির স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা। পাশাপাশি, স্থানীয় জেলেদের জীবিকা বজায় রাখতে এই বনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন ঘূর্ণিঝড় যখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উপকূলের পথ ধরে স্থলভাগে প্রবেশ করে তখন তার গতিবেগ থাকে প্রায় ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত।কিন্তু ম্যানগ্রোভের ঘন গাছের মাঝে ধাক্কা খেলে ঝড়ের গতিবেগ অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি ম্যানগ্রোভের শিকড় নদীর পাড়কে শক্ত বাঁধুনি দিয়ে আঁকড়ে রাখে। ফলে জলোচ্ছাসও কম হয়। পাড়েই ঢেউ ভেঙে যাওয়ায় উপকূলবর্তী এলাকার বাড়িঘরকে জলের তোড় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে না।

সাইক্লোন রুখল মানুষের বন্ধু ‘ম্যানগ্রোভ’, কিন্তু কীভাবে?

তবুও অস্তিত্ব সঙ্কটে ম্যানগ্রোভ!

কিছু মানুষ জানেই না এই ম্যানগ্রোভ আরণ্য বার বার কীভাবে রক্ষা করেছে মানুষকে।তথাকথিত সভ্য মানুষ সভ্যতার দোহাই দিয়ে কেটে চলেছে গাছ।তা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ম্যানগ্রোভ অরণ্যও।ভারতের ৭৫০০ কিলোমিটার উপকূলকে রক্ষা করে আসছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য।সমুদ্রের নোনা ও নদীর মিষ্টি জলের মিশ্রণে গজিয়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ যেকোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই টিকে থাকতে পারে। 

ভারতে সুন্দরবন ছাড়াও গুজরাট, রত্নগিরি, গোয়া, কৃষ্ণা-গোদাবরী উপকূল এবং আন্দামান নিকোবর-এ ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায়। এত উপকার তবুও নগরায়নের ঠেলায় আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে ম্যানগ্রোভ অরণ্য।উপকূলবর্তী এলাকায় চলছে উন্নয়নের নামে যথেচ্ছ ম্যানগ্রোভ নিধন। চিংড়ি চাষের জন্যও ম্যানগ্রোভের ব্যবহার বিপদ বাড়াচ্ছে।এছাড়া দূষণ, প্লাস্টিক, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি ম্যানগ্রোভকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।


[ছবি সৌজন্যঃ খোশখবর সাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে পিক্সাবে, আনস্প্ল্যাস, ফ্রিপিক, উইকিমিডিয়া কমন্স, গুগল ফটো সহ বিভিন্ন নিজস্ব সূত্র থেকে]

[ জ্ঞান বা তথ্যের কোনও কপিরাইট হয় বলে আমরা মনে করি না। পৃথিবীর বুকে প্রকাশিত অগুনতি বই, লাইব্রেরিতে ঠাসা সমুদ্র সমান জ্ঞান, অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা আকাশ সমান তথ্য থেকে দু-একটি তুলে এনে পাঠকদের সামনে রাখাই এই ব্লগসাইটের কাজ। তবে জ্ঞানত কোনও ভুল,বিকৃত বা অন্ধ ভাবনার তথ্য প্রকাশ করবে না ‘খোশখবর’।] 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code