নতুন সংসদ ভবন তিন তলা। সব মিলিয়ে এতে ৬৪,৫০০ বর্গমিটার জায়গা রয়েছে।
খোশখবর ডেস্কঃ চমৎকার শিল্পকর্মের উদাহরণ হিসেবে গড়ে উঠেছে ভারতের নতুন সংসদ ভবন।এই ভবনের ভেতরেই এবার স্থান পাচ্ছে ভারতের স্বাধীনতার সময় পাওয়া ঐতিহাসিক রাজদণ্ড ‘সেঙ্গল’। রবিবারএই ভবনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু কতটা জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে এই সংসদ ভবন? কী কী আছে এর পেটের ভেতরে,জেনে নেওয়া যাক সেসব তথ্যই।
নতুন সংসদ ভবন,বেশ কিছু তথ্য
এর আকৃতি ত্রিভুজাকার
নতুন সংসদ ভবনটি আকৃতিতে ত্রিভুজাকার।যে জমির উপর এই ভবন নির্মিত হয়েছে সেটি একটি ত্রিভুজারকার ক্ষেত্র।এমন ক্ষেত্রের উপর ভবন নির্মাণের আর এক উদ্দেশ্য হল ওই জমিকে সর্বোচ্চ কাজে ব্যবহার করা।এই নতুন ভবন পুরানো সংসদের পরিপূরক হিসাবে এবং দুটি ভবন একটি কমপ্লেক্স হিসাবে কাজ করবে।এই ভবনের স্থপতি বিমল প্যাটেলের মতে,এই আকৃতির মধ্যেই আছে বিভিন্ন ধর্মের ভাবনা।
কতটা এলাকা নিয়ে নতুন সংসদ ভবন
নতুন সংসদ ভবন তিন তলা।সব মিলিয়ে এতে ৬৪,৫০০ বর্গমিটার জায়গা রয়েছে।বর্তমানে ৫৪৩টি লোকসভা আসন থাকলেও নতুন ভবনের লোকসভা চেম্বারে আসন সংখ্যা থাকছে ৮৮৮টি।এই আসন সংখ্যা ১২৭২ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে।এতে থাকছে না সেন্ট্রাল হল।সেজন্য লোকসভাই উভয় কক্ষের যৌথ বৈঠকের জন্য ব্যবহৃত হবে।
নতুন ভবনের প্রবেশ পথ
নতুন ভবনে তিনটে আনুষ্ঠানিক প্রবেশপথ রয়েছে।তিন দিকে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, লোকসভার স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য তিনটি আনুষ্ঠানিক প্রবেশদ্বার রয়েছে। পার্লামেন্ট ভ্রমনের জন্য দর্শনার্থী সহ জনসাধারণের প্রবেশদ্বার সম্ভবত থাকছে পার্লামেন্ট স্ট্রিটে, প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া ভবনের কাছে।
পরিবেশ বান্ধব ভবন
গ্রিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে - যা পুরানোটির তুলনায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুত খরচ কমিয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।রাখা হয়েছে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং ওয়াটার রিসাইক্লিং সিস্টেম।আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের মতে বাড়িটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা পরবর্তী পরবর্তী ১৫০ বছর টিকে যাবে।
ভূমিকম্প নিরাপদ ভবন
যেহেতু দিল্লি সিসমিক জোন- পাঁচ-এ রয়েছে, তাই এই বাড়ি তৈরিতে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।এর ফলে বড়সড় ভূমিকম্পেও কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না ভবনের উপর।
লোকসভা, রাজ্যসভার থিম ভাবনা
নতুন লোকসভা চেম্বারে ময়ূর থিম ব্যবহার করা হয়েছে।রাজ্যসভার কক্ষ পদ্ম থিম দিয়ে সাজানো হয়েছে। লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয় ক্ষেত্রেই, দুজন সাংসদ একটি বেঞ্চে বসতে পারবেন এবং প্রতিটি সাংসদের ডেস্কে একটি টাচ স্ক্রিন মাল্টিমিডিয়া ডিসপ্লে থাকবে।এটি সংসদ সদস্যদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে।
রাজ্যসভার চেম্বার
রাজ্যসভার চেম্বার আকারে অনেক বড় করা হয়েছে।পুরোনো ভবনে ২৫০ জনের বসার জায়গা থাকলেও নতুন ভবনে ৩৮৪ সংসদ সদস্যর (এমপি) বসার ব্যবস্থা থাকছে।
সংবিধান হল
নতুন ভবনে একটি সংবিধান হল রয়েছে, যেখানে ভারতীয় গণতন্ত্রের পথে হাঁটার নানা তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এমপিদের জন্য সুবিধা
এমপিদের ব্যবহারের জন্য লাউঞ্জ, ডাইনিং হল এবং লাইব্রেরির সুবিধে থাকছে। বিল্ডিংয়ে একটি কেন্দ্রীয় জায়গায় থাকছে একটি বটগাছ।
নতুন অফিস স্পেস
পুরনো ভবনে তিনটির বদলে নতুন ভবনে ছয় নতুন কমিটি কক্ষ রয়েছে।এছাড়া কাউন্সিলর অফ মিনিস্টার অফিস হিসেবে রয়েছে ৯২টি কক্ষ।
সমগ্র দেশ থেকে এসেছে নানা উপাদান
ভবনের ভেতর এবং বাইরের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী।যেমন ধোলপুরের সরমাথুরা থেকে আনা হয়েছে বেলেপাথর।রাজস্থানের জয়সলমেরের লাখা গ্রাম থেকে গ্রানাইট।একইভাবে নাগপুর থেকে আনা হয়েছে সেগুন কাঠের আসবাব।কাঠের স্থাপত্যের নকশা করেছেন মুম্বইয়ের কারিগররা। উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের ভাদোহি তাঁতিদের কাছ থেকে এসেছে কার্পেট।
জাতীয় প্রতীক,গান্ধী মূর্তি
নতুন সংসদ ভবনের মাথায় রয়েছে জাতীয় প্রতীক। ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি এই এমব্লেম। প্রায় ৯৫০০ কেজি ওজনের এই প্রতীক উচ্চতায় প্রায় ৬.৫ মিটার। চওড়ায় ৪.৪ মিটার। এই প্রতীকটিকে ধরে রাখার জন্য তার চারপাশে লাগানো হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ কেজির স্টিলের পাত।প্রবেশপথে অশোক চক্র এবং ‘সত্যমেব জয়তে’ শব্দগুলো পাথরে খোদাই করা হয়েছে।পুরানো ভবনের মুখোমুখি নতুন ভবনে প্রবেশদ্বারে থাকছে পদ্মভূষণ-পুরষ্কারপ্রাপ্ত ভাস্কর রাম ভি সুতারের তৈরি মহাত্মা গান্ধীর ১৬ ফুট লম্বা ব্রোঞ্জের মূর্তি।
নির্মাণের খরচ
নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ করতে প্রাথমিক চুক্তিতে টাটা প্রকল্পকে ৮৬১.৯ কোটি টাকা বরাত দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর নয়া খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা।
তথ্যের উৎসঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস/ টাইমস অফ ইন্ডিয়া ( অনলাইন)
ব্যবহৃত ছবি নেওয়া হয়েছে টুইটার থেকে
[ছবি সৌজন্যঃ খোশখবর সাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে পিক্সাবে, আনস্প্ল্যাস, ফ্রিপিক, উইকিমিডিয়া কমন্স, গুগল ফটো সহ বিভিন্ন নিজস্ব সূত্র থেকে]
[ জ্ঞান বা তথ্যের কোনও কপিরাইট হয় বলে আমরা মনে করি না। পৃথিবীর বুকে প্রকাশিত অগুনতি বই, লাইব্রেরিতে ঠাসা সমুদ্র সমান জ্ঞান, অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা আকাশ সমান তথ্য থেকে দু-একটি তুলে এনে পাঠকদের সামনে রাখাই এই ব্লগসাইটের কাজ। তবে জ্ঞানত কোনও ভুল,বিকৃত বা অন্ধ ভাবনার তথ্য প্রকাশ করবে না ‘খোশখবর’।]
0 মন্তব্যসমূহ