এখনই ব্যবস্থা না নিলে বা গোটা শহরের সবকিছু অন্যত্র সরিয়ে না নিলে শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর
আরও পড়ুনঃ গলে যাচ্ছে আন্টার্কটিকার দৈত্যাকার হিমবাহ,বাড়ছে পৃথিবীর বিপদ
কোন কোন শহর ডুবে যাবে,কবে যাবে ?
ব্যাপারটা এইরকম নয় যে আগামীকালই টাইটানিক জাহাজের মত একটা শহর পুরো জলের তলায় চলে যাবে।বিজনেস ইনসাইডারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে জলের তলায় চলে যেতে পারে পৃথিবীর বিখ্যাত ১১টি শহর। এর সবচেয়ে প্রথমে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা শহরের নাম। রয়েছে নাইজেরিয়ার লাগোস, টেক্সাসের হিউস্টন,বাংলাদেশের ঢাকা,ইতালির ভেনিস শহরের নাম।ফলে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বা গোটা শহরের সবকিছু অন্যত্র সরিয়ে না নিলে শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর।
কোন কোন শহর ডুবে যাবে,কবে যাবে ?
ব্যাপারটা এইরকম নয় যে আগামীকালই টাইটানিক জাহাজের মত একটা শহর পুরো জলের তলায় চলে যাবে।বিজনেস ইনসাইডারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে জলের তলায় চলে যেতে পারে পৃথিবীর বিখ্যাত ১১টি শহর। এর সবচেয়ে প্রথমে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা শহরের নাম। রয়েছে নাইজেরিয়ার লাগোস, টেক্সাসের হিউস্টন,বাংলাদেশের ঢাকা,ইতালির ভেনিস শহরের নাম।ফলে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বা গোটা শহরের সবকিছু অন্যত্র সরিয়ে না নিলে শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর।
আরও পড়ুনঃ ৫৭ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত জায়ান্ট পেঙ্গুইন
ডুবে যাচ্ছে জাকার্তা,অন্য জায়গায় রাজধানী হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার
ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান রাজধানী জাকার্তা বিশ্বের ব্যস্ত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। জনবহুল এই শহরের দূষণের মাত্রাও বিপজ্জনক। শহরের সুবিধের জন্যে অত্যধিক ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তুলে ফেলার কারণে জাকার্তা প্রতি বছর ৬.৭ ইঞ্চি পর্যন্ত ডুবে যাচ্ছে বা বসে যাচ্ছে। ভূবিজ্ঞানীদের হিসেব বলছে ২০৫০ সালের মধ্যে শহরের বেশিরভাগ অংশ জাভা সাগরের তলায় নিচে চলে যেতে পারে। আর প্রকৃতির বিরুদ্ধে চলার খেসারত দিতে নতুন রাজধানী গড়তে বাধ্য হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া।জাকার্তা থেকে ২,০০০ কিলোমিটার দূরে বোর্নিওতে তৈরি হচ্ছে সে দেশের এই নতুন রাজধানী। আগামী বছর ১৭ অগস্ট ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা দিবসের দিনে খুলে যেতে পারে এই নতুন রাজধানীর দরজা। আর রাজধানীর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হতে লাগবে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত সময়।
জাকার্তা ছাড়া ডুবে যেতে পারে যে যে শহর -
লাগোস, নাইজেরিয়া
লাগোস নাইজেরিয়ার সর্বাধিক জনবহুল ও আফ্রিকার বৃহত্তম শহর। লাগোস সমগ্র আফ্রিকার একটি প্রধান আর্থিক কেন্দ্র। এখানেই এই মহাদেশের বৃহত্তম ও ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এটি বিশ্বের দ্রুত বেড়ে ওঠা শহরগুলির মধ্যে একটি। পরিবেশের কারণ লাগোসের নিম্ন উপকূলরেখা ক্রমাগত ক্ষয়ে যাচ্ছে। উষ্ণায়নের কারণে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬.৬ ফুট বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তাতেই কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে আফ্রিকার এই বৃহত্তম শহরটির উপর।প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২ সালে করা একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন থেকে ন ফুট বৃদ্ধিই এই অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
হিউস্টন, টেক্সাস
হিউস্টন আমেরিকার টেক্সাস স্টেটে অবস্থিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহত্তম শহর।অত্যধিক ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তুলে নেওয়ার কারণে হিউস্টনের কিছু অংশ প্রতি বছর ২ ইঞ্চি হারে ডুবে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। হিউস্টন যত বেশি ডুবে যাবে, হারিকেন হার্ভে-এর মতো ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়বে এই শহর।এর জন্য ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৩০০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ঢাকা, বাংলাদেশ
পরিবেশ দূষণ আর গ্রিনহাউজ গ্যাসের ক্রমবর্ধমান নিঃসরণের জেরে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’- এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে এর জেরে আগামী কয়েক দশকেই ৩ দশমিক ৩ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা।কোথাও কোথাও জলের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে ১৪ থেকে ৩৩ ফুট পর্যন্ত।বিজ্ঞানীদের শঙ্কা এই শতকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৪ ফুট বাড়লে দেড় কোটির বেশি মানুষের ঠিকানা ঢাকা শহর জলের নিচে তলিয়ে যাবে। ঢাকা ছাড়াও তলিয়ে যাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামও। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য - জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে এমন রাসায়নিক নির্গমনের মাত্র ০.৩ শতাংশ উৎপাদন করলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জেরে সবচেয়ে বড় পরিণতির মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশ।
ভেনিস, ইতালি
ইতালির ভেনিস শহরটি জলের মাঝেই গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর জোয়ারের কারণে বন্যা হয় এই শহরে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ভেনিসে এবং দ্বিতীয়ত এই শহর নিজেই ডুবে যাচ্ছে। হিসেব বলছে এই শহর প্রতি বছর ২ মিলিমিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। ভেনিসে বন্যা রুখে দেওয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করেও প্রতিবছর বন্যা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত বাড়লে ২০৩০ সালের মধ্যে এই শহর জলের নিচে তলিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ভার্জিনিয়া বিচ, ভার্জিনিয়া
ভার্জিনিয়া বিচ আমেরিকার ভার্জিনিয়া স্টেটের একটি বিখ্যাত শহর। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হিসাবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তালিকাভুক্ত হয়েছে এই শহরের নাম।এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম ব্রিজ-সুড়ঙ্গ কমপ্লেক্স। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী ২১০০ সালের মধ্যে ভার্জিনিয়া বিচে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ব্যাংকক পৃথিবীর রঙিন শহরগুলোর মধ্যে একটি।চোখ জুড়ানো সমুদ্র সৈকত, সুদৃশ্য বাড়িঘর-অফিস,স্কাই স্ক্রাপার থেকে শুরু করে বিনোদনের হরেক পসরা,ক্যাসিনো-কী নেই থাইল্যান্ডের রাজধানী শহরে।আধুনিক ভোগ বিলাসের এই কেন্দ্র এখন চূড়ান্ত বিপদ সীমায় দাঁড়িয়ে। সমুদ্রের জলস্তর থেকে মাত্র পাঁচ মিটার উঁচুতে থাকা এই শহর গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জেরে যে কোনও দিন ডুবতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। ভূবিজ্ঞানীদের তথ্য জানাচ্ছে ব্যাংকক বছরে ১ সেন্টিমিটারের বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই শহরের ৪০শতাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে চলে যেতে পারে।
নিউ অরলিন্স,লুইসিয়ানা
২০১৬ সালে নাসা একটা সমীক্ষায় জানায় যে নিউ অরলিন্সের কিছু অংশ প্রতি বছরে ২ ইঞ্চি হারে ডুবে যাচ্ছে এবং ২১০০ সালের মধ্যে তা জলের নীচে চলে যাবে। আসলে মার্কিন দেশের লুইসিয়ানা প্রদেশের নিউ অরলিন্সের গঠনটাই অনেকটা জলে ঘেরা একটা বাটির মত। ১৮৯৫ সালে নিউ অরলিন্সের মাত্র ৫ শতাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ছিল, ১৯৩৫ সাল নাগাদ, শহরের প্রায় ৩০% সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ছিল এবং আজ শহরের অর্ধেকেরও বেশি ভূভাগ সমুদ্র স্তরের চেয়ে নীচে রয়েছে । ২০০৫ সালের হারিকেন ক্যাটরিনার হানা এই এলাকার প্রকৃতিটাই বদলে দিয়েছে। ১৯৩০ এর দশক থেকে লুইসিয়ানা ২০০০ বর্গ মাইল জমি হারিয়েছে এবং তা এখনও চলছে। ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন ২০৫০ সালের মধ্যে নিউ অরলিন্স সম্ভবত জলের নিচে চলে যাবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে যে সব শহর ডুবে যাওয়ার মত বিপদের সামনে পড়ছে তার মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ডের রটারডাম শহর।দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটা তথ্যে বলা হয়েছে রটারডাম শহরের ৯০ শতাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে রয়েছে।সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বাড়বে এই সুন্দর শহর বন্যায় ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি তত বাড়বে।প্রায় একই পরিস্থিতি আমস্টারডাম, হেগ শহরগুলিরও।তবে বন্যা প্রতিবোধের নানা ব্যবস্থার পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ অরণ্য তৈরি করে ডাচরা হারানো জমি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু পৃথিবীর উষ্ণায়ন ঘটে চললে ২০৩০ সালের পরে তা কতটা কার্যকর হবে সে নিয়ে সন্দেহ আছে গবেষকদের মনে।
আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর
প্রাচীন সভ্যতার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছিল সমুদ্র অথবা নদীর তীর ঘেষে। আবার সময়ের নিরিখে এই জলরাশিই গিলে নিয়েছে অনেক শহরকে। যেমন জলের তলায় হারিয়ে যাওয়া শহরগুলোর মধ্যে আছে মিশরের হেরাক্লিয়ন। আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ২০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে সাগরের জলে ডুবে থাকা এক শহরের নাম হেরাক্লিয়ন। প্রায় ৩২০০ বছর আগে ছিল এ শহরের অস্তিত্ব।তখন রীতিমত জেগে ছিল এ শহর। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পরে সমুদ্র এটিকে গ্রাস করে নেয়।সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েই চলায় আলেকজান্দ্রিয়ার সৈকতগুলি ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।আর এর জেরেই ঝুঁকির মুখে ইতিহাসের শহর আলেকজান্দ্রিয়া।বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে ভূমধ্যসাগরের উচ্চতা ২ ফুট বাড়লে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া নামক শহরটি।
মিয়ামি, ফ্লোরিডা
মিয়ামি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সবচেয়ে বড় শহর। এটি আটলান্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত। মিয়ামি যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম জনবহুল শহর।গোটাবিশ্বে অর্থনীতি, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, ফ্যাশন, গণমাধ্যম, বিনোদন, শিল্পের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে মিয়ামির।এজন্য মিয়ামিকে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।বিশ্বের অন্যান্য এলাকার তুলনায় মিয়ামির সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত হারে বাড়ছে। যার ফলে বন্যা, দূষিত পানীয় জল এবং বাড়িঘর ও রাস্তার বড় ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত ডুবে যাওয়ার পথে হাঁটছে মিয়ামি।পরিবেশবাদী লেখক জেফ গুডেল মিয়ামিকে ‘বড় সমস্যায় থাকা একটি প্রধান শহরের পোস্টার চাইল্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
ডুবে যাচ্ছে জাকার্তা,অন্য জায়গায় রাজধানী হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার
ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান রাজধানী জাকার্তা বিশ্বের ব্যস্ত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। জনবহুল এই শহরের দূষণের মাত্রাও বিপজ্জনক। শহরের সুবিধের জন্যে অত্যধিক ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তুলে ফেলার কারণে জাকার্তা প্রতি বছর ৬.৭ ইঞ্চি পর্যন্ত ডুবে যাচ্ছে বা বসে যাচ্ছে। ভূবিজ্ঞানীদের হিসেব বলছে ২০৫০ সালের মধ্যে শহরের বেশিরভাগ অংশ জাভা সাগরের তলায় নিচে চলে যেতে পারে। আর প্রকৃতির বিরুদ্ধে চলার খেসারত দিতে নতুন রাজধানী গড়তে বাধ্য হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া।জাকার্তা থেকে ২,০০০ কিলোমিটার দূরে বোর্নিওতে তৈরি হচ্ছে সে দেশের এই নতুন রাজধানী। আগামী বছর ১৭ অগস্ট ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা দিবসের দিনে খুলে যেতে পারে এই নতুন রাজধানীর দরজা। আর রাজধানীর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হতে লাগবে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত সময়।
জাকার্তা ছাড়া ডুবে যেতে পারে যে যে শহর -
লাগোস, নাইজেরিয়া
লাগোস নাইজেরিয়ার সর্বাধিক জনবহুল ও আফ্রিকার বৃহত্তম শহর। লাগোস সমগ্র আফ্রিকার একটি প্রধান আর্থিক কেন্দ্র। এখানেই এই মহাদেশের বৃহত্তম ও ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এটি বিশ্বের দ্রুত বেড়ে ওঠা শহরগুলির মধ্যে একটি। পরিবেশের কারণ লাগোসের নিম্ন উপকূলরেখা ক্রমাগত ক্ষয়ে যাচ্ছে। উষ্ণায়নের কারণে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬.৬ ফুট বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তাতেই কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে আফ্রিকার এই বৃহত্তম শহরটির উপর।প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২ সালে করা একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন থেকে ন ফুট বৃদ্ধিই এই অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
হিউস্টন, টেক্সাস
হিউস্টন আমেরিকার টেক্সাস স্টেটে অবস্থিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহত্তম শহর।অত্যধিক ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তুলে নেওয়ার কারণে হিউস্টনের কিছু অংশ প্রতি বছর ২ ইঞ্চি হারে ডুবে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। হিউস্টন যত বেশি ডুবে যাবে, হারিকেন হার্ভে-এর মতো ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়বে এই শহর।এর জন্য ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৩০০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ঢাকা, বাংলাদেশ
পরিবেশ দূষণ আর গ্রিনহাউজ গ্যাসের ক্রমবর্ধমান নিঃসরণের জেরে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’- এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে এর জেরে আগামী কয়েক দশকেই ৩ দশমিক ৩ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা।কোথাও কোথাও জলের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে ১৪ থেকে ৩৩ ফুট পর্যন্ত।বিজ্ঞানীদের শঙ্কা এই শতকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৪ ফুট বাড়লে দেড় কোটির বেশি মানুষের ঠিকানা ঢাকা শহর জলের নিচে তলিয়ে যাবে। ঢাকা ছাড়াও তলিয়ে যাবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামও। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য - জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে এমন রাসায়নিক নির্গমনের মাত্র ০.৩ শতাংশ উৎপাদন করলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জেরে সবচেয়ে বড় পরিণতির মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশ।
ভেনিস, ইতালি
ইতালির ভেনিস শহরটি জলের মাঝেই গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর জোয়ারের কারণে বন্যা হয় এই শহরে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ভেনিসে এবং দ্বিতীয়ত এই শহর নিজেই ডুবে যাচ্ছে। হিসেব বলছে এই শহর প্রতি বছর ২ মিলিমিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। ভেনিসে বন্যা রুখে দেওয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করেও প্রতিবছর বন্যা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত বাড়লে ২০৩০ সালের মধ্যে এই শহর জলের নিচে তলিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ভার্জিনিয়া বিচ, ভার্জিনিয়া
ভার্জিনিয়া বিচ আমেরিকার ভার্জিনিয়া স্টেটের একটি বিখ্যাত শহর। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হিসাবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তালিকাভুক্ত হয়েছে এই শহরের নাম।এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম ব্রিজ-সুড়ঙ্গ কমপ্লেক্স। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী ২১০০ সালের মধ্যে ভার্জিনিয়া বিচে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ব্যাংকক পৃথিবীর রঙিন শহরগুলোর মধ্যে একটি।চোখ জুড়ানো সমুদ্র সৈকত, সুদৃশ্য বাড়িঘর-অফিস,স্কাই স্ক্রাপার থেকে শুরু করে বিনোদনের হরেক পসরা,ক্যাসিনো-কী নেই থাইল্যান্ডের রাজধানী শহরে।আধুনিক ভোগ বিলাসের এই কেন্দ্র এখন চূড়ান্ত বিপদ সীমায় দাঁড়িয়ে। সমুদ্রের জলস্তর থেকে মাত্র পাঁচ মিটার উঁচুতে থাকা এই শহর গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জেরে যে কোনও দিন ডুবতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। ভূবিজ্ঞানীদের তথ্য জানাচ্ছে ব্যাংকক বছরে ১ সেন্টিমিটারের বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই শহরের ৪০শতাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে চলে যেতে পারে।
নিউ অরলিন্স,লুইসিয়ানা
২০১৬ সালে নাসা একটা সমীক্ষায় জানায় যে নিউ অরলিন্সের কিছু অংশ প্রতি বছরে ২ ইঞ্চি হারে ডুবে যাচ্ছে এবং ২১০০ সালের মধ্যে তা জলের নীচে চলে যাবে। আসলে মার্কিন দেশের লুইসিয়ানা প্রদেশের নিউ অরলিন্সের গঠনটাই অনেকটা জলে ঘেরা একটা বাটির মত। ১৮৯৫ সালে নিউ অরলিন্সের মাত্র ৫ শতাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ছিল, ১৯৩৫ সাল নাগাদ, শহরের প্রায় ৩০% সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে ছিল এবং আজ শহরের অর্ধেকেরও বেশি ভূভাগ সমুদ্র স্তরের চেয়ে নীচে রয়েছে । ২০০৫ সালের হারিকেন ক্যাটরিনার হানা এই এলাকার প্রকৃতিটাই বদলে দিয়েছে। ১৯৩০ এর দশক থেকে লুইসিয়ানা ২০০০ বর্গ মাইল জমি হারিয়েছে এবং তা এখনও চলছে। ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন ২০৫০ সালের মধ্যে নিউ অরলিন্স সম্ভবত জলের নিচে চলে যাবে।
রটারডাম, নেদারল্যান্ডস
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে যে সব শহর ডুবে যাওয়ার মত বিপদের সামনে পড়ছে তার মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ডের রটারডাম শহর।দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটা তথ্যে বলা হয়েছে রটারডাম শহরের ৯০ শতাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে রয়েছে।সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বাড়বে এই সুন্দর শহর বন্যায় ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি তত বাড়বে।প্রায় একই পরিস্থিতি আমস্টারডাম, হেগ শহরগুলিরও।তবে বন্যা প্রতিবোধের নানা ব্যবস্থার পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ অরণ্য তৈরি করে ডাচরা হারানো জমি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু পৃথিবীর উষ্ণায়ন ঘটে চললে ২০৩০ সালের পরে তা কতটা কার্যকর হবে সে নিয়ে সন্দেহ আছে গবেষকদের মনে।
আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর
প্রাচীন সভ্যতার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছিল সমুদ্র অথবা নদীর তীর ঘেষে। আবার সময়ের নিরিখে এই জলরাশিই গিলে নিয়েছে অনেক শহরকে। যেমন জলের তলায় হারিয়ে যাওয়া শহরগুলোর মধ্যে আছে মিশরের হেরাক্লিয়ন। আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ২০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে সাগরের জলে ডুবে থাকা এক শহরের নাম হেরাক্লিয়ন। প্রায় ৩২০০ বছর আগে ছিল এ শহরের অস্তিত্ব।তখন রীতিমত জেগে ছিল এ শহর। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পরে সমুদ্র এটিকে গ্রাস করে নেয়।সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েই চলায় আলেকজান্দ্রিয়ার সৈকতগুলি ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।আর এর জেরেই ঝুঁকির মুখে ইতিহাসের শহর আলেকজান্দ্রিয়া।বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে ভূমধ্যসাগরের উচ্চতা ২ ফুট বাড়লে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া নামক শহরটি।
মিয়ামি, ফ্লোরিডা
মিয়ামি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সবচেয়ে বড় শহর। এটি আটলান্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত। মিয়ামি যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম জনবহুল শহর।গোটাবিশ্বে অর্থনীতি, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, ফ্যাশন, গণমাধ্যম, বিনোদন, শিল্পের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে মিয়ামির।এজন্য মিয়ামিকে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।বিশ্বের অন্যান্য এলাকার তুলনায় মিয়ামির সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত হারে বাড়ছে। যার ফলে বন্যা, দূষিত পানীয় জল এবং বাড়িঘর ও রাস্তার বড় ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত ডুবে যাওয়ার পথে হাঁটছে মিয়ামি।পরিবেশবাদী লেখক জেফ গুডেল মিয়ামিকে ‘বড় সমস্যায় থাকা একটি প্রধান শহরের পোস্টার চাইল্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
[ছবি সৌজন্যঃ খোশখবর সাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে পিক্সাবে, আনস্প্ল্যাস, ফ্রিপিক, উইকিমিডিয়া কমন্স, গুগল ফটো সহ বিভিন্ন নিজস্ব সূত্র থেকে]
[ জ্ঞান বা তথ্যের কোনও কপিরাইট হয় বলে আমরা মনে করি না। পৃথিবীর বুকে প্রকাশিত অগুনতি বই, লাইব্রেরিতে ঠাসা সমুদ্র সমান জ্ঞান, অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা আকাশ সমান তথ্য থেকে দু-একটি তুলে এনে পাঠকদের সামনে রাখাই এই ব্লগসাইটের কাজ।তবে জ্ঞানত কোনও ভুল,বিকৃত বা অন্ধ ভাবনার তথ্য প্রকাশ করবে না ‘খোশখবর’।]
0 মন্তব্যসমূহ